Class 6 History Chapter 2 Question answer | ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের প্রশ্নোত্তর দ্বিতীয় অধ্যায়
হ্যালো বন্ধুরা ,
তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করছি ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের প্রশ্নোত্তর দ্বিতীয় অধ্যায়।এখানে তোমরা খুঁজে পাবে তোমাদের পাঠ্য পুস্তকের ইতিহাসের প্রশ্নোত্তর। যেমন- আদিম যুগের মানুষদের পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য , আদিম মানুষ কিভাবে জটিল থেকে উন্নত সমাজ গড়েতোলে এবং কিছু টীকা। আশা করি তোমরা উপকৃত হবে।
ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের প্রশ্নোত্তর দ্বিতীয় অধ্যায়
প্রশ্নঃ - অস্ট্রালোপিথেকাস জাতীয় আদিম মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ
?
উত্তরঃ - অস্ট্রালোপিথেকাস এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল - (ক) এদের আবির্ভাব ঘটিছিল
আনুমানিক ৪০ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ বছর আগে। (খ) এরা দু-পায়ে ভর দিয়ে কোনোক্রমে
দাঁড়াতে পারত। (গ) এরা শক্ত বাদাম, শুকনো ফল চিবিয়ে খেত , ফলে তাদের চোয়াল
ছিল শক্ত ও সুগঠিত। (ঘ) এরা পাথর ছুঁড়তে চেষ্টা করত।
প্রশ্নঃ- হোমো হাবিলিসের বৈশিষ্ট্য লেখ ?
উত্তরঃ - হোমো হাবিলিস কথার অর্থ হল দক্ষ মানুষ। এরা আনুমানিক ২৬ লক্ষ থেকে
১৭ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে আবির্ভুত হয়। এরা দলবদ্ধভাবে থাকত ও হাঁটতে পারত।
খাদ্য হিসাবে এরা ফলমূলের পাশাপাশি সম্ভবত কাঁচা মাংসও খেত। এরাই প্রথম
পাথরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে শেখে। একটা পাথরের সাথে আরেকটা পাথরকে
জোরে আঘাত করে পাথরের অস্ত্র বানাত।
প্রশ্নঃ - হোমো ইরেকটাস জাতীয় মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ ?
উত্তরঃ - হোমো ইরেকটাস কথার অর্থ হল সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারা মানুষ। আনুমানিক
২০ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার বছর আগে এদের আবির্ভাব ঘটে। এরা দু-পায়ে ভর করে
সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারত। এরা দলবদ্ধভাবে গুহায় বাস করত। এরা শিকার করতে পারত।
এরাই প্রথম আগুনের ব্যবহার শিখেছিল। এরাই প্রথম হাতকুঠার বানিয়ে
ছিল।
প্রশ্নঃ - হোমো স্যাপিয়েন্স মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী ?
উত্তরঃ - হোমো স্যাপিয়েন্স কথার অর্থ বুদ্ধিমান মানুষ। আনুমানিক ২ লক্ষ ৩০
হাজার বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিল। এরা দলবদ্ধভাবে শিকার করত। নানা কাজে আগুন
ব্যবহার করত ও মাংস পুড়িয়ে খেত। বস্ত্র হিসেবে পশুর চামড়া পড়ত। ছোটো ,
তীক্ষ্ণ ও ধারালো পাথরের অস্ত্র তৈরী করতে শিখেছিল। এরা বর্শা জাতীয় পাথরের
হাতিয়ার বানাতে পারত।
প্রশ্নঃ - আগুন জ্বালাতে শেখার পর আদিম মানুষের কি কি সুবিধা হয়েছিল
?
উত্তরঃ - আগুনের ব্যবহার শেখার ফলে আদিম মানুষের জীবনে বেশ কিছু বদল দেখা
যেতে থাকে। একদিন প্রচন্ড শীতের হাতে থেকে মানুষকে বাঁচাত আগুন। পাশাপাশি
বিভিন্ন জন্তুর আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্যেও আগুনের ব্যবহার শুরু হয়। তাছাড়া
আগুনের ব্যবহার আদিম মানুষের খাবার অভ্যাসও বদলে দিয়েছিল। এইসময় কাঁচা খাওয়ার
বদলে খাবার আগুনে ঝলসে খোয়া শুরু করে। ঝলসানো নরম মাংস খাওয়ার ফলে তাদের
কোয়েল ধীরে ধীরে সরু হয়ে আসে , সামনের ধারালো উঁচু দাঁত ছোটো হতে থাকে। তাদের
চেহারায় নানারকম বদল লক্ষ করা যায়। আদিম মানুষের শরীরে জোর বাড়ে ও বুধিরও
বিকাশ হয়।
প্রশ্নঃ - পাহাড়ের হাতিয়ার তৈরির কৌশল কিভাবে পুরোনো পাথরের যুগের বিভিন্ন
পর্বকে আলাদা করে ?
উত্তরঃ - পুরোনো পাথরের যুগে আদিম মানুষের জীবন ছিল বেশ কঠিন ও কষ্টের।
দলবদ্ধভাবে তারা পশু শিকার করত। শিকারে তারা গাছের দল ও ভোঁতা পাথর ব্যবহার
করত। পরবর্তিকালে পাথরের হাতিয়ার তৈরির কৌশল ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছিল।
হাতিয়ারগুলি আস্তে আস্তে হাল্কা , ছোটো ও ধারালো হয়ে উঠেছিল। একটা বড়ো পাথরের
গায়ে আঘাত করে তার কোনাচে অংশ গুলো বার করে সেগুলিকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার
করা হত। ফলে ভারী নুড়ি পাথরের হাতিয়ারের ব্যবহার কমতে থাকে। পাথরের হাতিয়ার
তৈরীর কৌশলের এই তফাৎ দিয়েই পুরোনো পাথরের যুগের বিভিন্ন পর্বকে আলাদা করা
হয়।
প্রশ্নঃ - নতুন পাথরের যুগ কোন কোন দিক থেকে নতুন লেখ ?
উত্তরঃ - আদিম মানুষের ইতিহাসে নতুন পাথরের যুগ অনেকদিক থেকেই নতুন ছিল। এই
সময় নানা পরিবর্তন এসেছিল। পাথরের হাতিয়ার বানানোর কৌশল অনেক উন্নত হয়েছিল।
নানারকম পাথরের হাতিয়ার তৈরি করা শুরু হয়। পাশাপাশি ছোটো পাথরের হাতিয়ারও
এসময় ব্যবহার করা হত। নতুন পাথরের যুগে শিকার করতে বা পশু চরাতে ছেলেরা দোল
ব্যাংকে যেত। মেয়েরা বাচ্চাদের দেখাশোনা করত। কৃষিকাজ শেখার ফলে মানুষ ধীরে
ধীরে বসতির দিকে যেতে থাকে।
প্রশ্নঃ - কিভাবে আদিম মানুষের সমাজ থেকে জটিল ও উন্নত সমাজ ব্যবস্থা দেখা
দেয় ?
উত্তরঃ - আদিম মানুষ শিকার ও পশুপালন করে যা পেত তা সবাই ভাগ করে নিত। তাই
সেই সমাজে ভেদাভেদ বিশেষ ছিল না। তুলনায় কৃষি সমাজ অনেক বেশি জটিল। সেই সমাজে
জমি ও ফসলের সমান ভাগাভাগি ছিল না। পাশাপাশি কৃষিতে বাড়তি ফসল ফোলানো যেত।
তাই সবাইকে নিজেদের পেট ভরানোর জন্য নিজেদের চাষ করতে হতো না। ফলে কৃষির বদলে
অনেকেই কারিগর বা অন্যান্য কাজ করতে থাকে। চাষের কাজে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির
প্রয়োজন হতো। পাথর ও কাঠ দিয়ে সেগুলো বানাত কারিগরেরা। ফলে ক্রমশ আদিম
মানুষের সমাজ থেকে জটিল ও উন্নত সমাজ ব্যবস্থা দেখা দেয়।
প্রশ্নঃ - সংস্কৃতি বলতে কী বোঝ ?
উত্তরঃ - সংস্কৃতি বলতে এমনিতে নাচ-গান, পোশাক, শিল্প-সাহিত্য বোঝায়। কিন্তু
সংস্কৃতি কথাটার আরেকটা দিক রয়েছে। খাওয়া, ঘুম এসব মানুষের শরীরের দরকার হয়।
তার বাইরে নানান কাজকর্ম করে মানুষ। সেইসব কাজকর্মও কিন্তু, মানুষের
সংস্কৃতির অংশ। সেভাবে বললে আদিম মানুষেরও সংস্কৃতি ছিল। পাথরের ভোঁতা
হাতিয়ার বানানোও সেই সংস্কৃতির মধ্যেই পড়ে। সংস্কৃতির জন্যই যে কোনো পরিবেশে
মানুষ নিজেদের মানিয়ে নিতে পেরেছে।
প্রশ্নঃ - টীকা লেখ : লুসি, হুন্সগি উপত্যকা, ট্যারো-ট্যারো, বাগোড়,
উত্তরঃ - i) লুসি :- আফ্রিকা
মহাদেশের ইথিওপিয়ার হাদার নামক স্থানে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে একটা
অস্ট্রালোপিথেকাসের কঙ্কালের কিছু অংশ পাওয়া গেছে। কঙ্কালটি প্রায় ৩২ লক্ষ
বছর আগের একটি মেয়ের। কঙ্কালটির নাম দোয়া হয়েছিল লুসি। লুসির মস্তিস্ক
অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় বেশি বড়ো ছিল।
ii) হুন্সগি উপত্যকা :-
কর্ণাটকের গুলবর্গা জেলার উত্তর-পশ্চিমে হুন্সগি উপত্যকায় ইসামপুর গ্রামের
পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কাথটা হাল্লা খাল। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে মাটি খুঁড়ে সেখানে
পুরোনো পাথরের যুগের হাতিয়ার পাওয়া গেছে। এর বেশির ভাগই হাত-কুড়ুল, ছোরা ,
চাঁছুনি জাতীয়। অনেকের মতে হুন্সগিতে পাথরের হাতিয়ার তৈরী হত। খালের জল
নানারকম বন্যজন্তু ও গাছপালা ঐ অঞ্চলে ছিল। সম্ভবত সেজন্য ঐ জায়গাটা বেছে
নিয়েছিল আদিম মানুষ।
iii) ট্যারো-ট্যারো :- ইউরোপের
স্পেনে একটি পাহাড়ি এলাকা হলো আলতামিরা। সেখানে কয়েকটি প্রাচীন গুহার খোঁজ
পাওয়া যায়। এক প্রত্নতাত্ত্বিক তাঁর ছোটো মেয়েকে নিয়ে গুহাগুলি দেখতে
গিয়েছিলেন। হঠাৎ মেয়েটি চিৎকার করে উঠে ট্যারো-ট্যারো অর্থাৎ ষাঁড়
-ষাঁড়।
iv) বাগোড় ;- রাজস্থানের
বাগোড়ে আদিম মানুষের বসতির চিহ্ন পাওয়া গেছে। একেবারে প্রথমদিকে বাগোড়ের
বাসিন্দারা শিকার করেই খাবার জোটাত। কিছু কিছু পশু পালনও তাদের জানা
ছিল। বাগোড়ে অনেকগুলি পশুর হাড় পাওয়া গেছে। সেগুলি থেকে অনুমান করা হয় পরের
দিকে গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বেড়েছিল।পাশাপাশি কমতে থাকে শিকার করা পশুর
সংখ্যা। অর্থাৎ বাগোড়ের মানুষ ধীরে ধীরে গৃহপালিত পশুর গুরুত্ব বুঝতে
পেরেছিল। সেভাবে দেখলে বাগোড়ে শিকার ও পশুপালন দুই-ই চলত।
আরও পড়ুনঃ
অধ্যায় ১ঃ ইতিহাসের ধারণা | Click Here |
অধ্যায় ২ঃ ভারতীয় উপমহাদেশে আদিম মানুষ | Click Here |
অধ্যায় ৩ঃ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা | Click Here |
অধ্যায় ৪ঃ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা ২ | Click Here |
অধ্যায় ৫ঃ খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের ভারতীয় উপমহাদেহশ | Click Here |
অধ্যায় ৬ঃ সাম্রাজ্য বিস্তার ও শাসন | Click Here |
অধ্যায় ৭ঃ অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা | Click Here |
অধ্যায় ৮ঃ প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিচর্চা | Click Here |
অধ্যায় ৯ঃ ভারত সমকালীন বহির্বিশ্ব | Click Here |
No comments:
Post a Comment