১। সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখঃ
১. প্রশ্ন: ঋগবেদের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ নদী হলো
(A) গঙ্গা
(B) যমুনা
(C) সিন্ধু
(D) সরস্বতী
✔ সঠিক উত্তর: সিন্ধু
২. প্রশ্ন: মেঘালিত বলা হয়
(A) মুদ্রাকে
(B) বড় পাথরের সমাধিকে
(C) যজ্ঞশালাকে
(D) প্রাসাদকে
✔ সঠিক উত্তর: বড় পাথরের সমাধিকে
৩. প্রশ্ন: মগধের প্রথম রাজধানী ছিল
(A) পাটলিপুত্র
(B) উজ্জয়িনী
(C) রাজগৃহ
(D) বৈশালী
✔ সঠিক উত্তর: রাজগৃহ
৪. প্রশ্ন: বৌদ্ধ সন্ন্যাসী উপগুপ্ত বৌদ্ধ ধর্মের দীক্ষা দেন
(A) চন্দ্রগুপ্তকে
(B) অশোককে
(C) হর্ষবর্ধনকে
(D) কানিষ্ককে
✔ সঠিক উত্তর: অশোককে
৫. প্রশ্ন: কারসাপন হলো
(A) অস্ত্র
(B) দেবতা
(C) মুদ্রার নাম
(D) প্রাসাদ
✔ সঠিক উত্তর: মুদ্রার নাম
৬. প্রশ্ন: দক্ষিণাত্যের কালো মাটিতে চাষ ভালো হতো
(A) গমের
(B) ধানের
(C) তুলোর
(D) যবের
✔ সঠিক উত্তর: তুলোর
৭. প্রশ্ন: চরক সংগীতা হলো
(A) দর্শন গ্রন্থ
(B) চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ
(C) ইতিহাস গ্রন্থ
(D) নাট্যশাস্ত্র
✔ সঠিক উত্তর: চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ
৮. প্রশ্ন: নাগানন্দ নামক নাটকটির রচয়িতা হলেন
(A) কালিদাস
(B) ভাস
(C) শুদ্রক
(D) হর্ষবর্ধন
✔ সঠিক উত্তর: হর্ষবর্ধন
৯. প্রশ্ন: পৃথিবী গোলাকার ও নিজের অক্ষের উপর পৃথিবী ঘুরছে এই উক্তিটির বক্তা হলেন
(A) বরাহমিহির
(B) আর্যভট্ট
(C) চাণক্য
(D) পাণিনি
✔ সঠিক উত্তর: আর্যভট্ট
১০. প্রশ্ন: হেরিটোটাস ছিলেন
(A) কবি
(B) ঐতিহাসিক
(C) দার্শনিক
(D) চিকিৎসক
✔ সঠিক উত্তর: ঐতিহাসিক
১১. প্রশ্ন: মেগাস্থিনিস দূত ছিলেন
(A) আলেকজান্ডারের
(B) সেলিউকাসের
(C) ডারিয়াসের
(D) হেরডসের
✔ সঠিক উত্তর: সেলিউকাসের
১২. প্রশ্ন: আরামিয়া হলো
(A) একটি নগরী
(B) একটি ভাষা
(C) একটি নদী
(D) একটি সাম্রাজ্য
✔ সঠিক উত্তর: ভাষা
১৩. প্রশ্ন: জবনিকা হলো
(A) মুদ্রার নাম
(B) নাটকের পর্দা
(C) যজ্ঞশালা
(D) শস্য
✔ সঠিক উত্তর: নাটকের পর্দা
১৪. প্রশ্ন: নির্বাণ শব্দের অর্থ হলো
(A) সুখ
(B) মুক্তি
(C) মৃত্যু
(D) পুনর্জন্ম
✔ সঠিক উত্তর: মুক্তি
১৫. প্রশ্ন: ঋগবেদের অংশ ‘সোত্র’ ভেবে স্তুতি শ্লোক যে শিক্ষা ছিল ব্যক্তিগত তা হল
(A) পুরাণ শিক্ষা
(B) বৈদিক শিক্ষা
(C) দর্শন শিক্ষা
(D) তন্ত্র শিক্ষা
✔ সঠিক উত্তর: বৈদিক শিক্ষা
১৬. প্রশ্ন: মহাভারত লেখেন
(A) কালিদাস
(B) কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস
(C) বাল্মীকি
(D) পানিনি
✔ সঠিক উত্তর: কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস
১৭. প্রশ্ন: সেতুর জল ব্যবহারের জন্য জলকর দিতে হতো
(A) সৈন্যদের
(B) কৃষকদের
(C) ব্যবসায়ীদের
(D) পুরোহিতদের
✔ সঠিক উত্তর: কৃষকদের
১৮. প্রশ্ন: তামিল ভাষায় রামায়ণ লেখেন
(A) কালিদাস
(B) কম্বন
(C) তিরুবল্লুভর
(D) পাণিনি
✔ সঠিক উত্তর: কম্বন
১৯. প্রশ্ন: গুপ্তযুগের পরে হাতেখড়ির মত যে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল তার নাম
(A) বিদ্যারম্ভ
(B) উপনয়ন
(C) পূর্ণাহুতি
(D) অন্নপ্রাশন
✔ সঠিক উত্তর: বিদ্যারম্ভ
২০. প্রশ্ন: গৌতম বুদ্ধ মারা যান
(A) খ্রিষ্টপূর্ব 400 অব্দে
(B) খ্রিষ্টপূর্ব 486 অব্দে
(C) খ্রিষ্টপূর্ব 350 অব্দে
(D) খ্রিষ্টপূর্ব 600 অব্দে
✔ সঠিক উত্তর: খ্রিষ্টপূর্ব 486 অব্দে
২১. প্রশ্ন: গোল মরিচের ফলন বিখ্যাত ছিল
(A) গুজরাটে
(B) কেরলে
(C) তামিলনাড়ুতে
(D) বিহারে
✔ সঠিক উত্তর: কেরলে
২২. প্রশ্ন: মহাভারতের আদি নাম ছিল
(A) ভরতসংহিতা
(B) জয়কাব্য
(C) জাতক
(D) কাব্যমঞ্জরী
✔ সঠিক উত্তর: জয়কাব্য
২৩. প্রশ্ন: বেশিরভাগ মহাজনপদ যে নদী উপত্যাকায় অবস্থিত ছিল তা হল
(A) গঙ্গা
(B) সিন্ধু
(C) সরস্বতী
(D) যমুনা
✔ সঠিক উত্তর: গঙ্গা
২৪. প্রশ্ন: যে পর্বতের উল্লেখ ঋগবেদে নেই
(A) হিমালয়
(B) বিন্ধ্য
(C) আফগানিস্তানের পাহাড়
(D) অরাবল্লী
✔ সঠিক উত্তর: বিন্ধ্য
২৫. প্রশ্ন: হেরডসের মতে ‘ইন্দু’ ছিল
(A) এক দেবতা
(B) এক নগরী
(C) পারসিক সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ
(D) একটি নদী
✔ সঠিক উত্তর: পারসিক সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ
২৬. প্রশ্ন: মরগজমুলেজ পথের পাশে ফলক লাগানো হতো
(A) দিক বোঝাতে
(B) দূরত্ব ও দিক বোঝাতে
(C) বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে
(D) রাজা নির্দেশ দিতে
✔ সঠিক উত্তর: দূরত্ব ও দিক বোঝাতে
27. প্রশ্ন: নন্দ বংশের শেষ রাজা কে ছিলেন?
(A) ধননন্দ
(B) মহাপদ্ম নন্দ
(C) উদয়ন
(D) শূদ্রক
✔ সঠিক উত্তর: ধননন্দ
28. প্রশ্ন: চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজধানী কোথায় ছিল?
(A) উজ্জয়িনী
(B) বৈশালী
(C) পাটলিপুত্র
(D) রাজগৃহ
✔ সঠিক উত্তর: পাটলিপুত্র
29. প্রশ্ন: মৃচকটিকমের রচয়িতা কে?
(A) ভাস
(B) কালিদাস
(C) শূদ্রক
(D) ভবভূতি
✔ সঠিক উত্তর: শূদ্রক
30. প্রশ্ন: গুপ্তাব্দের প্রচলন করেন
(A) সমুদ্রগুপ্ত
(B) প্রথম চন্দ্রগুপ্ত
(C) বিক্রমাদিত্য
(D) হর্ষবর্ধন
✔ সঠিক উত্তর: প্রথম চন্দ্রগুপ্ত
২. শূন্যস্থান পূরণ করো:
|
ক স্তম্ভ
|
খ স্তম্ভ
|
|
অশোক
|
মুদ্রারাক্ষস
|
|
বিমকদ ফিসেস
|
জুনাগড় প্রশস্তি
|
|
বিশাখাদত্ত
|
মগধরাজ
|
|
রুদ্র দামন
|
দমঅর্ত
|
৫. এক বা দুটি বাক্যে উত্তর দাও:
১. প্রশ্ন: ঘোড়ায় বসে পিছনে ঘুরে তীর ছোড়ার কায়দা কারা চালু করেন?
উত্তর: ঘোড়ায় বসে পিছনে ঘুরে তীর ছোড়ার কায়দা পল্লবরা চালু করেন।
২. প্রশ্ন: সূর্য সিদ্ধান্ত এর রচয়িতার নাম কি?
উত্তর: সূর্য সিদ্ধান্ত এর রচয়িতার নাম হলো বরাহমের।
৩. প্রশ্ন: রূপক কেম এর উত্তরটি হল?
উত্তর: গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রপুত্র আমলে চালু হওয়া প্রথম রূপর মুদ্রার নাম রূপক ছিল।
৪. প্রশ্ন: কোন আমলে নুনকে খনিজ দ্রব্যের মধ্যে ধরা হতো?
উত্তর: মৌর্য আমলে ।
৫. প্রশ্ন: জৈন ধর্মের প্রচারক কে কি বলা হতো?
উত্তর: তীর্থঙ্কর বলা হতো।
৬. প্রশ্ন: আইহল প্রশস্তি কে লিখেছিলেন?
উত্তর: আইহল প্রশস্তি রবিকীর্তি লিখেছিলেন।
৭. প্রশ্ন: গৌতম বুদ্ধের প্রথম নাম কি ছিল?
উত্তর: গৌতম বুদ্ধের প্রথম নাম ছিল সিদ্ধার্থ ।
৮. প্রশ্ন: রাজধানীর নাম কি ছিল বৈজিদের?
উত্তর: বৈজিদের রাজধানীর নাম ছিল বৈশালী।
৯. প্রশ্ন: টানা ও পড়েন কি?
উত্তর: টানা ও পড়েন হলো দুই রকমের সুতো।
১০. প্রশ্ন: বিদ শব্দের অর্থ কি?
উত্তর: বিদ শব্দের অর্থ হলো জ্ঞান।
১১. প্রশ্ন: জৈন ধর্মের মূল উপদেশ গুলি কটি ভাগে সাজানো হয়েছিল?
উত্তর: জৈন ধর্মের মূল উপদেশ গুলি মোট ১২ টি ভাগে সাজানো হয়েছিল ।
১২. প্রশ্ন: বর্ধমান মহাবীর কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: বর্ধমান মহাবীর খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪০ অব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
১৩. প্রশ্ন: মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর: মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য।
১৪. প্রশ্ন: অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা কে?
উত্তর: অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা কৌটিল্য।
১৫. প্রশ্ন: শিলাদিত্য উপাধি কার ছিল?
উত্তর: শিলাদিত্য উপাধি হর্ষবর্ধনের ছিল।
১৬. প্রশ্ন: কে ভারতবর্ষকে মূলত গরমের দেশ বলেছেন?
উত্তর: সুয়ানজাং ভারতবর্ষকে মূলত গরমের দেশ বলেছেন।
১৭. প্রশ্ন: ব্যাবিলনের একজন বিখ্যাত রাজার নাম লেখ?
উত্তর: ব্যাবিলনের একজন বিখ্যাত রাজার নাম হামুরাবিব ।
১৮. প্রশ্ন: মেসোপটেমিয়া শব্দের অর্থ কি?
উত্তর: মেসোপটেমিয়া শব্দের অর্থ দুটি নদীর মধ্যবর্তী দেশ।
১৯. প্রশ্ন: ভারতের নেপোলিয়ন বলে কাকে অভিহিত করা হয়?
উত্তর: ভারতের নেপোলিয়ন বলে সমুদ্রগুপ্তকে অভিহিত করা হয়।
২০. প্রশ্ন: সভা ও সমিতি কি?
উত্তর: বৈদিক যুগে রাজাকে শাসন কাজে সাহায্য ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য সভা ও সমিতি নামে পরিষদ ছিল । সভা বয়স্ক ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে উঠত এবং সমিতি গোষ্ঠীর সকলকে নিয়ে গড়ে উঠত । সভা ও সমিতিতে রাজাকে পরামর্শদান, যুদ্ধ ও রাজনীতি বিষয়ে আলোচনা হতো
২১. প্রশ্ন: দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর কারা?
উত্তর: জৈনদের দুটি সম্প্রদায় হলো দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর । ভদ্রবাহুর নেতৃত্বে দাক্ষিণাত্যের জৈনরা মহাবীরের অনুশাসনগুলি কঠোরভাবে মেনে চলতেন এবং কোনো পোশাক পড়তেন না, এজন্য এদের দিগম্বর বলা হয় । অন্যদিকে শ্রীলভদের নেতৃত্বে উত্তর ভারতের জৈনরা সাদা কাপড় পড়তেন, এজন্য এদের শ্বেতাম্বর বলা হয়।
২২. প্রশ্নঃ ক্ষত্রপ কাদের বলে?
উত্তর: ক্ষত্রপ ও মহাখত্রপ শব্দগুলি রাজকীয় উপাধি। পারস্যের রাজ্য বা প্রদেশকে স্ট্র্যাপি বলা হতো এবং এই স্ট্র্যাপির শাসককে স্ট্র্যাপ বলা হতো, যা থেকে ধ্বনি বিকৃতি ঘটে ক্ষত্রপ হয়। শক রাজারা মধ্য ও পশ্চিম ভারতে রাজ্য গড়ে তুলে এই ক্ষত্রপ ও মহাখত্রপ উপাধি নেন।
২৩. প্রশ্ন: কার্সাপন কি?
উত্তর: মহাজনপদ যুগে মুদ্রা ব্যবস্থার বিকাশ ঘটেছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যের বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মুদ্রা বা ধাতুর মুদ্রা ব্যবহৃত হতো। আর কার্সাপন হলো ধাতুর তৈরি বহুল প্রচলিত এইরকম এক ধরনের মুদ্রা যা সে যুগে বিনিময়ের মাধ্যম ছিল।
২৪. প্রশ্ন: ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী লিপি কি?
উত্তর: প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে দুই রকমের লিপি ব্যবহৃত হতো, একটি ব্রাহ্মী লিপি এবং অপরটি খরোষ্ঠী লিপি। ব্রাহ্মী লিপি বাম থেকে ডান দিকে লেখা হতো, আর খরোষ্ঠী লিপি ডান দিক থেকে বাম দিকে লেখা হতো।
২৫. প্রশ্ন: নগরাষ্ট্র বা পলিশ কি?
উত্তর: পর্বত সংকুল গ্রিসে অনেকগুলি পলিশ গড়ে ওঠে। প্রাচীন গ্রিসের পাহাড়িঘেরা অনেকগুলি ছোট ছোট রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল। এই ছোট ছোট রাষ্ট্রকেই বলা হতো নগরাষ্ট্র বা পলিশ। বিখ্যাত পলিশ হলো এথেন্স এবং স্পাটা। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় শাসন কেন্দ্র হিসেবে পলিশ গড়ে ওঠে।
২৬. প্রশ্ন: কে মিশরকে নীল নদের দান বলেছেন?
উত্তর: প্রাচীন সভ্যতা ও পিরামিডের দেশ মিশরকে নীল নদের দান বলা হয়। গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডাস মিশরকে নীল নদের দান বলে মন্তব্য করেছেন। নীলনদ মরুপ্রায় মিশরের জীবনরেখার মতো প্রবাহিত । নীলনদ না থাকলে মিশর দেশটিও মরুভূমি হয়ে যেত। এইজন্য হেরোডাস মিশরকে নীল নদের দান বলেছেন।
২৭. প্রশ্ন: কালিদাসের দুটি বিখ্যাত নাটকের নাম লেখো।
উত্তর: গুপ্তযুগের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক এবং দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সভাকবি মহাকবি কালিদাস রচিত দুটি বিখ্যাত নাটকের নাম হলো অভিজ্ঞান শকুন্তলা ও মালবিকাগ্নিমিত্রম।
৭. টিকা লেখো (৩-৪ বাক্য):
১. প্রশ্ন: গুহাবাস
উত্তর: গুহাবাস ছিল মূলত সন্ন্যাসীদের বাসস্থান। এগুলি কৃত্রিমভাবে বানানো হতো পাহাড় কেটে। এই গুহাগুলির ভেতরে মানুষ বাস করতো বলে এগুলিকে গুহাবাস বলা হয়। সম্রাট অশোক ও তার পরবর্তী মৌর্য সম্রাটগণ অনেক গুহাবাস তৈরি করেছিলেন। এই গুহাবাসগুলিতে সাধারণত আজীবিক সন্ন্যাসীরা বসবাস করতো।
২. প্রশ্ন: সঙ্গম
উত্তর: সঙ্গম মানে এক জায়গায় জড়ো হওয়া। দক্ষিণ ভারতের মাদুরা নগরীতে তিনটি সাহিত্য সম্মেলন হয়। এই সাহিত্য সম্মেলনে মূলত তামিল সাহিত্যই ছিল, তাই তামিল সাহিত্যকেই সঙ্গম সাহিত্য বলা হয়। প্রাচীন সঙ্গম সাহিত্যের পরিচয় পাওয়া যায় একটি কবিতা সংকলন থেকে। কবি ও চারণ কবিদের উদ্যোগে সঙ্গম সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছিল।
৩. প্রশ্ন: স্ত্রী ধন
উত্তর: গুপ্ত যুগে স্ত্রী লোকের সম্পদকে স্ত্রী ধন বলা হতো । এই যুগে বিয়ের সময় মেয়েরা কিছু সম্পদ পেতেন। এই সম্পদের ওপর একমাত্র তারই অধিকার থাকতো এবং তারা নিজেদের ইচ্ছামত এই সম্পদ ব্যবহার করতে পারতেন। তবে স্ত্রী ধন দেওয়ার কথা সমাজ সব সমাজে চালু ছিল না।
৪. প্রশ্ন: মহামাত্র
উত্তর: সম্রাট অশোকের সময়ে অমাত্রদের কথা জানা যায় না, তার বদলে মহামাত্ররা সবথেকে উঁচু পথগুলি পেতেন। সম্রাট অশোকের শাসন ব্যবস্থা অনেকটাই মহামাত্রদের উপর নির্ভর করত। মহামাত্রদের মধ্যে পদের নানা ভাগ ছিল এবং তাদের কাজের এলাকাও আলাদা ছিল। মেয়েদেরও মহামাত্র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতো।
৫. প্রশ্ন: অষ্টাঙ্গিক মার্ক / অষ্টাঙ্গিক মার্গ কি?
উত্তর: গৌতম বুদ্ধ বলেছেন মানুষের জীবনের দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আটটি উপায় রয়েছে। এই আটটি উপায়কে একসঙ্গে অষ্টাঙ্গিক মার্ক বা মার্গ বলা হয়। মার্গ মানে পথ । এই আটটি পথ বা মার্গ হলো: সৎ বাক্য, সৎকার্য, সৎ জীবিকা, সৎ চেষ্টা, সৎ চিন্তা, সৎ চেতনা, সৎ সংকল্প ও সৎ সমাধি । বুদ্ধ মনে করতেন এই অষ্টাঙ্গিক মার্ক পালন করলে মানুষ দুঃখ-কষ্টের হাত থেকে মুক্তি পাবে।
৬. প্রশ্ন: সাম্রাজ্য
উত্তর: সাম্রাজ্য বলতে বোঝায় কয়েকটি অধীন রাজ্য নিয়ে গঠিত একটি বড় শাসন এলাকা। কোনো রাজার অধীন অনেক রাজ্য নিয়ে সাম্রাজ্য গঠিত হয়। কোনো একজন রাজা অন্য রাজ্য দখল করলে তার অধীনে বড় এলাকা বা সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে।
৭. প্রশ্ন: আর্যভট্ট
উত্তর: প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে আর্যভট্ট মৌলিক অবদান রেখেছেন । তিনি গণিতকে একটি আলাদা বিষয় হিসেবে তুলে ধরেন এবং শূন্যকে আলাদা সংখ্যা হিসেবে ব্যবহার করেন। এছাড়া সময়, গ্রহ-নক্ষত্র বিষয়েও আলোচনা করেন। তার মতে পৃথিবী গোলাকার এবং নিজের কক্ষপথে ঘুরছে । তিনি চন্দ্রগ্রহণ এর কারণ ব্যাখ্যা করেন । তৎকালীন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তার মতামত ছিল আধুনিক।
৮. প্রশ্ন: চতুরাশ্রম প্রথা কি?
উত্তর: আর্যদের সমগ্র জীবন ছকে বাঁধা চারটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল: ব্রহ্মচার্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ, সন্ন্যাস। এই প্রথাকে চতুরাশ্রম প্রথা বলা হয় ।
ব্রহ্মচার্য পর্যায়ে ছাত্ররা গুরুগৃহ থেকে পড়াশোনা করতো; গার্হস্থ্য পর্যায়ে ছাত্ররা বিবাহ করে সংসার পালন করতো; বানপ্রস্থ পর্যায়ে বনবাসী জীবন পালন করতে হতো এবং সন্ন্যাস পর্যায়ে কুটির তৈরি করে বাকি জীবন ঈশ্বর চিন্তায় কাটাতে হতো। এই চতুরাশ্রম প্রথা শূদ্র ছাড়া বাকি তিন বর্ণের ক্ষেত্রে চালু ছিল।
৯. প্রশ্ন: এলাহাবাদ প্রশস্তি গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তর: গুপ্ত বংশে বিশেষ করে সমুদ্রগুপ্তের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে এলাহাবাদ প্রশস্তি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । এটি সমুদ্রগুপ্তের মহাকবি হরিসেন রচনা করেন এবং ব্রাহ্মী লিপি ও সংস্কৃত ভাষায় লেখা। এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে সমুদ্রগুপ্তের পূর্বপুরুষদের নাম, আর্যবর্ত ও দাক্ষিণাত্যে তার বিজয় এবং ব্যক্তিগত গুণাবলীর কথা জানা যায়। এই কারণে এলাহাবাদ প্রশস্তি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
১০. প্রশ্ন:গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন কিভাবে ঘটে?
উত্তর: একসময় বিশাল শক্তিশালী গুপ্ত সাম্রাজ্য দুর্বল সম্রাট, বিচ্ছিন্নতা ও বৈদেশিক আক্রমণের কারণে পতনের পথে এগিয়ে চলে। শেষের দিকে গুপ্ত সম্রাটরা দুর্বল হওয়ায় স্থানীয় শাসকেরা স্বাধীন হয়ে যায়। বিভিন্ন বৈদেশিক জাতি, যেমন হুন, আক্রমণ করে দুর্বল গুপ্ত সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ ভেঙে দেয়। এই সমস্ত কারণে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
১১. প্রশ্ন: স্তূপ, চৈত্য এবং বিহার কি?
উত্তর: স্তূপ:গৌতম বুদ্ধ তার দেহাবশেষের উপর স্তূপ তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন । স্তূপ বলতে বোঝায় অর্ধগোলাকার ডিবি । মৌর্য পূর্ববর্তী যুগে মাটি দিয়ে স্তূপ তৈরি হলেও মৌর্য পরবর্তী সময়ে এর নির্মাণ প্রসার লাভ করে । বিখ্যাত স্তূপগুলি হলো ভারত, হুত, সাঁচি, অমরাবতী ।
চৈত্য: স্তূপের সঙ্গে সঙ্গে চৈত্য বানানো হতো, যার বেশিরভাগই পাহাড় কেটে গুহাবাস হিসাবে তৈরি। চৈত্যের শেষ প্রান্তে উপাসনার জন্য একটি স্তূপ থাকতো ।
বিহার: বৌদ্ধভিক্ষুদের থাকা ও পড়াশোনার জন্য বিহার তৈরি হতো। বিহার আসলে অনেকগুলি গুহার সমষ্টি ছিল, যা পরবর্তীকালে ইট দিয়ে সংঘারাম বা বিহার তৈরি করা হতো।
৮. সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (৪-৫ বাক্য):
১. প্রশ্ন: মৌর্য আমলের অবসর সময় কাটানোর উপায়গুলি উল্লেখ করো।
উত্তর: মৌর্য আমলে অবসর সময় কাটানোর নানা উপায় ছিল । নাচ, গান ও অভিনয়ের প্রচলন ছিল বলে জানা যায় । পাশাপাশি জাদুর খেলা ও নানান রকম দড়ির কসরত সাধারণ মানুষকে আনন্দ দিত। পাশা খেলা, শিকার, রথের দৌড়, কুস্তি প্রভৃতি ছিল ধনী মানুষদের অবসর কাটানোর উপায়। বড় বড় উৎসবে সমস্ত মানুষের মধ্যে বিনা পয়সায় খাবার ও পানীয় বিলি করা হতো।
২. প্রশ্ন: অগ্রহর ব্যবস্থা কি? / অগ্রহার ব্যবস্থা কি?
উত্তর: প্রাচীন ভারতে, বিশেষত গুপ্ত ও গুপ্ত পরবর্তী যুগে, রাজা ব্রাহ্মণ, মঠ প্রভৃতি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে তাদের ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ ও শিক্ষা দীক্ষা পরিচালনার জন্য নিষ্কর জমি প্রদান করতেন যা অগ্রহর ব্যবস্থা নামে পরিচিত । এই জমিগুলি ব্রাহ্মণ বা বৌদ্ধবিহারকে দান করা হতো ।
অগ্রহরের অন্তর্গত অঞ্চল থেকে দান গ্রহীতা যে রাজস্ব আদায় করতেন তা দিয়ে তিনি নিজ ব্যয় নির্বাহ করতেন । যেহেতু অগ্রহার অঞ্চলগুলি নিষ্কর ছিল, তাই রাজকর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারতো না । এর ফলস্বরূপ কৃষিকাজ ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল ।
৩. প্রশ্ন: মহাজনপদ কিভাবে সৃষ্টি হলো তা বর্ণনা করো।
উত্তর: জনপদ থেকে আয়তন ও ক্ষমতায় বড় রাজ্যকে মহাজনপদ বলে। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী নাগাদ বিভিন্ন জনপদের শাসকরা যুদ্ধে জয় লাভ করে নিজের রাজ্যের সীমানা অনেক গুণ বাড়িয়েছিল। ফলে ছোট জনপদ বড় হলো আর এভাবে সৃষ্টি হলো মহাজনপদ । বৈদিক যুগের রাজাদের থেকেও জনপদের শাসকরা আরো বেশি শক্তিশালী ও সম্পদশালী ছিলেন । সেই শক্তি ও সম্পদ ব্যবহার করে তারা নিজেদের ক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছিলেন।
৯. বিশদ উত্তর দাও (৭-৮ বাক্য/৫ নম্বর):
১. প্রশ্ন: ফা-হি-য়েন এর বর্ণনা অনুযায়ী ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজ সম্পর্কে আলোকপাত করো।
উত্তর: ফা-হি-য়েন ছিলেন চীন দেশের পর্যটক, যিনি গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিলেন । তার লেখা থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ ও সমাজ সম্পর্কে জানা যায়।
নগর: তিনি বলেছেন উপমহাদেশে অনেক নগর ছিল এবং সেগুলি ছিল অনেক উন্নত । পাটলিপুত্র ছিল সবচেয়ে সেরা নগর এবং সেখানে বসবাসকারী মানুষেরা ছিল সুখী ও সম্পদশালী। নগরে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হতো ।
চণ্ডালদের অবস্থান: দুষ্ট প্রকৃতির লোকেদের চণ্ডাল বলা হতো। তারা নগরের বাইরে থাকতো।
অতিথিদের যত্ন: এদেশের লোকেরা অতিথিদের খুব যত্ন করতো এবং তাদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তার দিকে খেয়াল রাখতো।
সামাজিক অবস্থা: গুপ্তযুগের সমাজ ব্যবস্থায় 'স্ত্রী ধন' প্রথাও চালু ছিল, যেখানে বিয়ের সময় মেয়েরা কিছু সম্পদ পেত যার ওপর একমাত্র তাদেরই অধিকার থাকত।
২. প্রশ্ন: জাতিভেদ প্রথা কঠোর হওয়ার ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞান চর্চায় কি কি সমস্যা তৈরি হয়েছিল?
উত্তর: জাতিভেদ প্রথা কঠোর হওয়ার ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞান চর্চায় বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। বলা হতো আগের জন্মে পূর্ণ করলে পরের জন্মে রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিরোধী ছিল। রোগ সারাতে গেলে নানান রকম খাদ্যের কথা বলা ছিল, অথচ ধর্মশাস্ত্রের মতে সেই খাদ্যের অনেকগুলি খাওয়া বারণ ছিল। ফলে ধর্মশাস্ত্রের সঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন সময় বিরোধ তৈরি হয়েছিল।
সুশ্রু সংহিতা চিকিৎসাবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল সব ব্যবচ্ছেদ বা মরা কাটা, কিন্তু ধর্মশাস্ত্রের মতে সব বা মৃতদেহ ছোঁয়া নিষেধ ছিল। ফলে মরা কাটা নিষিদ্ধ হওয়ার জন্য শারীরবিদ্যা ও শল্যচিকিৎসার চর্চা ধীরে ধীরে কমে গেল। বাঘটের পর থেকে শল্য চিকিৎসার ব্যাপারে তেমন উৎসাহ ছিল না। তাছাড়া চিকিৎসকরা রোগী ব্রাহ্মণ না শূদ্র তার বিচার করতেন না, ফলে প্রচলিত বর্ণাশ্রম প্রথার সঙ্গে চিকিৎসাবিদ্যার বিরোধিতা তৈরি হয় ।
৩. প্রশ্ন: খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাত ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজে নতুন ধর্মের চাহিদা সৃষ্টির কারণগুলি কি কি ছিল?
উত্তর: খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও বেদের বিরোধিতা করে যে নতুন ধর্মমতগুলির উদ্ভব হয়েছিল, তাকে নব্য ধর্ম আন্দোলন বলা হয় । সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ যেমন ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্ররা এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল ।
ক্ষত্রীয়দের সমর্থন: এই সময় লোহার অস্ত্রশস্ত্র তৈরি হওয়ার ফলে ক্ষত্রিয়দের ক্ষমতা বেড়েছিল। তাই তারা ব্রাহ্মণদের সমান ক্ষমতা দাবি করেছিল এবং নবধর্মকে সমর্থন করেছিল।
বৈশ্যদের সমর্থন: এই সময় কৃষি উৎপাদন বেড়েছিল এবং ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হয়েছিল । ব্রাহ্মণ্য ধর্ম কৃষক ও ব্যবসায়ী বা বৈশ্যদের কাজে বাধা সৃষ্টি করতো বলে তারা নবধর্মকে সমর্থন করেছিল ।
শূদ্রদের সমর্থন: ধর্মের নামে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান ও জাতিভেদ প্রথার জন্য সাধারণ মানুষ বৈদিক ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরোধিতা করে নব্য ধর্ম আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল।
৪.প্রশ্ন: ভারত ও বহির্বিশ্বের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগের জন্য স্থলপথ ও জলপথ উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
স্থলপথ: উত্তর-পশ্চিম দিকে বেশ কয়েকটি গিরিপথ ছিল, যেগুলি ধরে পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে উপমহাদেশের যোগাযোগ ঘটতো। অন্যদিকে হিমালয়ের পর্বত শ্রেণীর গিরিপথ দিয়ে চীন ও তিব্বতের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় ছিল। এই উত্তর-পশ্চিমের গিরিপথ দিয়েই বিদেশীরা উপমহাদেশে এসেছে, বিদেশী রাজনৈতিক শক্তিগুলি ক্ষমতা কায়েম করেছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান চলেছে।
জলপথ: সমুদ্রপথেও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় চলত। তাম্রলিপ্ত ছিল প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের একটি প্রধান বন্দর যা স্থলপথ ও জলপথ উভয় পথেই যাওয়া যেত।
৫. প্রশ্ন: মগধ সবচেয়ে শক্তিশালী মহাজনপদে পরিণত হওয়ার মূলে কি কি কারণ ছিল?
উত্তর: খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে যে ১৬ টি মহাজনপদ গড়ে উঠেছিল, তার মধ্যে মগধ বাকি মহাজনপদগুলির থেকে শক্তিশালী হয়েছিল ।
মগধের অবস্থান: মগধ ছিল নদী ও পাহাড় দিয়ে ঘেরা, ফলে বাইরের কোনো রাজ্য সহজে মগধ আক্রমণ করতে পারত না । এই অবস্থানই মগধের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূল কারণ ছিল।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি: গঙ্গার পলি মাটি দিয়ে তৈরি মগধের কৃষি জমিতে প্রচুর ফসল হতো। মগধে লোহা ও তামার খনি ছিল বলে মগধের সেনাবাহিনী সহজেই লোহার অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতে পারত। জলপথ ও স্থলপথে মগধের ব্যবসা-বাণিজ্য চলত।
রণ হস্তীর প্রাচুর্য: মগধের ঘনজঙ্গলে প্রচুর হাতি পাওয়া যেত, যা রাজারা যুদ্ধে কাজে লাগাতে পারতেন।
৬. প্রশ্ন: নালন্দা মহাবিহারের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো / নালন্দা বৌদ্ধবিহার সম্পর্কে যা জানা লেখো।
উত্তর: নালন্দা মহাবিহার ছিল প্রাচীনকালে ভারতের একটি বিখ্যাত বৌদ্ধ শিক্ষা কেন্দ্র ।
শিক্ষার্থী: এখানে দেশের ও দেশের বাইরের ছাত্ররা (যেমন চীন, তিব্বত, কোরিয়া, সুমাত্রা, জাভা) পড়াশোনা করতে আসতো। যেকোনো বর্ণ ও ধর্মের ছাত্র নালন্দা মহাবিহারে পড়তে পারতো।
খরচ ও ভর্তি: নালন্দা মহাবিহারে থাকা, খাওয়া ও পড়ার জন্য কোনো খরচ লাগতো না। তবে কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই এখানে ভর্তি হওয়া যেত।
শিক্ষক ও পরীক্ষা: এখানে বহু বিখ্যাত পণ্ডিত পড়াতেন [৪]। লেখাপড়া শেষ হওয়ার পরেও ছাত্রদের দিক পরীক্ষা দিতে হতো ।
৭.প্রশ্ন: গান্ধার শিল্প সম্পর্কে যা জানা লেখো
উত্তর: কুশান যুগে গ্রিক, রোমান ও ভারতীয় শিল্পরীতির সমন্বয়ে গান্ধার অঞ্চলে যে শিল্পের উদ্ভব হয়, তাকে গান্ধার শিল্প বলা হয়।
বিষয়বস্তু: বৌদ্ধ ধর্মকে ঘিরে গান্ধার শিল্প গড়ে উঠেছিল এবং এর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হলো বৌদ্ধমূর্তি।
বৈশিষ্ট্য: গান্ধার শিল্পীরা নতুন ধরনের বৌদ্ধমূর্তি তৈরি করেন, যার বৈশিষ্ট্য হলো টিকালো নাক, টানা ভুরু, আদো বোজা চোখ। মূর্তিগুলির পায়ে রোমানদের মতো জুতো ও সোনা রঙের ব্যবহার দেখা যায়।
প্রভাব: বুদ্ধের মূর্তি, তার ভঙ্গিমা এবং পোশাকের ব্যবহার সব মিলিয়ে গান্ধার শিল্পে গ্রিক ও রোমান শিল্পের সুস্পষ্ট ছাপ দেখা যায়। এছাড়াও ইরানী ও মধ্য এশিয়ার শিল্পের প্রভাবও গান্ধার শিল্পের উপর পড়েছিল।
৮. প্রশ্ন: মৌর্য আমলের শাসন ব্যবস্থার বর্ণনা দাও।
উত্তর: মৌর্য আমলের শাসন ব্যবস্থা ছিল সুসংগঠিত এবং এর পরিচালনার ভার অনেকাংশে রাজকর্মচারীদের উপর নির্ভরশীল ছিল।
মহামাত্রদের ভূমিকা: সম্রাট অশোকের সময়ে মহামাত্ররা ছিলেন সর্বোচ্চ পদাধিকারী রাজকর্মচারী। তাদের কাজের এলাকা নির্দিষ্ট ছিল এবং তাদের মধ্যে বিভিন্ন পদের ভাগ ছিল। এমনকি নারীদেরও মহামাত্র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতো। এর থেকে বোঝা যায়, শাসনকার্যে একটি সুবিন্যস্ত আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল।
অর্থনৈতিক দিক: মৌর্য আমলে নুনকে খনিজ দ্রব্যের মধ্যে গণ্য করা হতো, যা তৎকালীন অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ইঙ্গিত দেয়।
জনজীবন: এই সময়ে জনগণের অবসর বিনোদনের জন্য নাচ, গান, অভিনয়, জাদু খেলা, কুস্তি, শিকার এবং রথের দৌড়ের মতো নানা উপায় প্রচলিত ছিল। উৎসবে বিনামূল্যে খাবার ও পানীয় বিতরণেরও প্রচলন ছিল।
৯। প্রশ্ন গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের রাজ্য সম্পর্কে কি জানো?
উত্তর:গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্ত ছিলেন একজন অত্যন্ত শক্তিশালী ও বিজয়ী শাসক। তাকে ভারতের নেপোলিয়ন বলে অভিহিত করা হয়। তথ্যসূত্র তার রাজ্য এবং ব্যক্তিগত গুণাবলী সম্পর্কে জানার প্রধান উৎস হলো এলাহাবাদ প্রশস্তি। এই প্রশস্তিটি তার মহাকবি হরিসেন রচনা করেন এবং এটি ব্রাহ্মী লিপি ও সংস্কৃত ভাষায় লেখা।
সাম্রাজ্য বিস্তার এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে সমুদ্রগুপ্তের পূর্বপুরুষদের নাম এবং আর্যবর্ত (উত্তর ভারত) ও দাক্ষিণাত্য (দক্ষিণ ভারত) বিজয়ের কথা জানা যায়। তার বিজয় অভিযানগুলি বিশাল গুপ্ত সাম্রাজ্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যক্তিগত গুণাবলী এই প্রশস্তিতে তার ব্যক্তিগত গুণাবলীরও বর্ণনা রয়েছে, যা তাকে একজন আদর্শ শাসক হিসেবে তুলে ধরে।
১০। প্রশ্ন: গুপ্তযুগের সমাজ ব্যবস্থা কেমন ছিল তা সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: গুপ্তযুগের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে সমসাময়িক পর্যটকদের বিবরণ এবং স্থানীয় প্রথা থেকে ধারণা পাওয়া যায়। নগর জীবন: চীনা পর্যটক ফা-হিয়েনের বর্ণনা অনুযায়ী, এই সময় ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক উন্নত নগর ছিল, যার মধ্যে পাটলিপুত্র ছিল শ্রেষ্ঠ ।
নগরের মানুষেরা সুখী ও সম্পদশালী ছিল এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ প্রাপ্তির ব্যবস্থা ছিল । জাতিভেদ ও চণ্ডাল: সমাজে চণ্ডালদের মতো দুষ্ট প্রকৃতির লোকেরা নগরের বাইরে বাস করতো । জাতিভেদ প্রথা চালু ছিল, যদিও চিকিৎসকরা রোগী ব্রাহ্মণ না শূদ্র তা বিচার করতেন না, যা এই প্রথার কঠোরতার সঙ্গে কিছুটা বিরোধিতা তৈরি করত।
অতিথেয়তা ও নারী: ভারতীয়রা অতিথিদের খুব যত্ন করতো এবং তাদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতো। সমাজে স্ত্রী নিধন প্রথা প্রচলিত ছিল, যেখানে বিয়ের সময় মেয়েরা কিছু সম্পদ পেত যার ওপর একমাত্র তাদেরই অধিকার থাকত এবং তারা তা নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারত। তবে এই প্রথা সব সমাজে চালু ছিল না।
১১। প্রশ্ন: প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের জলশেষজ ব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে কৃষিকাজের উন্নতির জন্য জলসেচ ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। জলকর: জল ব্যবহারের জন্য কৃষকদের জলকর দিতে হতো । এটি প্রমাণ করে যে সেচ ব্যবস্থার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি ছিল এবং তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজস্ব আদায় করা হতো।
রাজকীয়/ধনী নিয়ন্ত্রণ: গরীব মানুষেরা নিজেদের উদ্যোগে জলসেচ প্রকল্প তৈরি করতে পারত না । এটি ইঙ্গিত দেয় যে বড় আকারের বা জটিল সেচ প্রকল্পগুলি হয়তো রাজ্য বা ধনী জমিদারদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো, কারণ এর জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি ও প্রযুক্তি সাধারণ কৃষকদের নাগালের বাইরে ছিল।
File Details:
Name: ষষ্ঠ শ্রেণির 3rd Unit Test ইতিহাস সাজেশন
Subject: ইতিহাস
Language: বাংলা
Page No:13
Size: 352Kbs
No comments:
Post a Comment