History Exercise Questions | Class 7th History Questions Answers
বন্ধুরা,
এখানে সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাসের অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর শেয়ার
করা হলো। এখানে খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের
বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর পেয়ে থাকবে। আশা করি এগুলি তোমাদের খুব
উপকারে আসবে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ের অনুশীলনী প্রশ্নোত্তর
১।শূন্যস্থান পূরণ করো:-
(ক) বঙ্গ নামের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় __________________
গ্রন্থে।
(i) ঐতরেয় অরণ্যক (ii) আইন-ই- আকবরী (iii)অর্থশাস্ত্র
উত্তরঃ - (i) ঐতরেয় অরণ্যক।
(খ) প্রাচীন বাংলার সীমানা তৈরী হয়েছিল __________, __________ এবং
_________ নদী দিয়ে।
(i) ভাগীরথী , পদ্মা , মেঘনা
(ii) গঙ্গা , ব্রহ্মপুত্র , দামোদর
(iii) কৃষ্ণা , কাবেরী ,
চন্দ্রভাঙা
উত্তরঃ -
(i) ভাগীরথী , পদ্মা , মেঘনা
(গ) সকলোত্তরপথনাথ উপাধি ছিল ______________ এর।
(i) শশাঙ্ক (ii)
হর্ষবর্ধন (iii)
রামপাল
উত্তরঃ -
(ii) হর্ষবর্ধন।
(ঘ) কৈবর্ত বিদ্রোহের একজন নেতা ছিলেন ___________ ।
(i) ভীম
(ii) রামপাল
(iii) প্রথম মহিপাল
উত্তরঃ - (i) ভীম।
(ঙ) সেন রাজা ____________ বাংলায় তুর্কি আক্রমণ ঘটেছিল।
(i) বিজয় সেন (ii) বল্লাল
সেন (iii) লক্ষণ
সেন
উত্তরঃ - (iii) লক্ষণ সেন।
(চ) সুলতানি যুগের একজন ঐতিহাসিকের নাম হল ______________ ।
(i) মোহাম্মদ ঘুরি
(ii) মিনহাজ - ই - সিরাজ
(iii) ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার
খলজি
উত্তরঃ -
(ii) মিনহাজ - ই - সিরাজ
২। "ক" স্তম্ভের সঙ্গে "খ" স্তম্ভ মিলিয়ে লেখো:-
ক-স্তম্ভ | খ-স্তম্ভ |
---|---|
(ক) বজ্রভূমি | বৌদ্ধ বিহার (খ) |
(খ) লো-টো-মো-চিহ | আধুনিক চট্টগ্রাম (ঙ) |
(গ) গঙ্গাইকোন্ডচোল | বাকপতিরাজ (ঘ) |
(ঘ) গৌড়বহো | উত্তর রাঢ় (ক) |
(ঙ) হরিকেল | অল-বিরুনি (চ) |
(চ) কিতাব-অল-হিন্দ | প্রথম রাজেন্দ্র (গ) |
(ক) এখনকার পচিমবঙ্গের একটি মানচিত্র দেখো। তাতে আদি মধ্যযুগের বাংলার কোন
কোন নদী দেখতে পাবে ?
বাংলার অনেকগুলি নদী বর্তমানও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যদিয়ে প্রবাহমান
রয়েছে। সেগুলি হল - গঙ্গা, ভাগীরথী, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, রূপনারায়ণ,
কাঁসাই, মহানন্দা, করতোয়া, তিস্তা।
(খ) শশাঙ্কের আমলে বাংলার আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল তা নিজের ভাষায় লেখ?
উত্তরঃ - শশাঙ্ক ছিলেন এক গুপ্ত সম্রাটের মহাসামন্ত। শশাঙ্কের শাসনের
৬০-৭০ বছর আগে থেকেই গৌড় ধীরে ধীরে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
শশাঙ্কের শাসনকালে যে ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তাকে বলা হয় গৌরতন্ত্র। শশানদের
আমলে সোনার মুদ্রা প্রচলিত ছিল। রুপার মুদ্রার প্রচলন না থাকায় এবং নকল
সোনার মুদ্রার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সেসময় মন্দাভাব দেখা দিয়েছিল।
ফলে সমাজে জমির চাহিদা বাড়তে থাকে। অর্থনীতি হয়ে পড়ে কৃষি নির্ভর।
বাণিজ্যের গুরুত্ব কমে যাওয়ার ফলে নগরের গুরুত্ব কমতে শুরু করে। আবার
কৃষির গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় সমাজ ক্রমশ গ্রামকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছিল।
সমাজে শ্রেষ্ঠী বা বণিকদের গুরুত্ব ও ক্ষমতা আগেকার যুগের থেকে কম হয়ে পড়ে।
স্থানীয় প্রধানরা এ যুগের শ্রেষ্ঠীদের মতো ক্ষমতাধর হয়ে
উঠেছিল।
(গ) মাৎস্যন্যায় কী ?
উত্তরঃ - মাৎস্যন্যায় বলতে দেশে রাজার অভাবে অরাজকতাকে বোঝানো হয়। পুকুরের
বড়ো মাছ যেমন ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে। অরাজকতার সময়ে তেমনি শক্তিশালী লোক
দুর্বল লোকের উপর অত্যাচার করে। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলা অভ্যন্তরীন ও
বৈদেশিক ক্ষেত্রে সঙ্কটজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। বাংলার রাজনৈতিক ঐক্য
ব্যাহত হয় এবং খন্ড খন্ড রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এইভাবে যে
অরাজকতাপূর্ন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তা মাৎস্যন্যায় নাম
পরিচিত।
(ঘ) খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টম শতকের দেশীয় বা আঞ্চলিক রাজ্যগুলিi কেমন করে উঠে ছিলi?
উত্তরঃ - গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতের নানা স্থানে আঞ্চলিকভাবে
অনিকগুলি রাজ্য গড়ে ওঠে, যেমন -
(i) গৌড়:- শশাঙ্ক ছিলেন এক গুপ্ত সম্রাটের মহাসামন্ত। ৬০৬ - ০৭
খ্রিস্টাব্দে শশাঙ্ক গৌড়ের শাসক হন। শশাঙ্ক উত্তর ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক
শক্তিদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বে অংশ নেন ও মৈত্রীর সম্পর্ক বজায় রাখত। এইভাবে
সে উত্তর-পশ্চিম বারাণসী পর্যন্ত তাঁর বিস্তৃত করে। শশাঙ্ক সমগ্র গৌড় দেশ,
মগধ-বুদ্ধগয়া অঞ্চল এবং ওড়িশার একাংশ নিজের অধিকারে আনে। উত্তর ভারতের
ক্ষমতাধর রাজ্যগুলির সঙ্গে লড়াই করে শশাঙ্ক গৌড়ের মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
৬৩৭-৩৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর আগে পযন্ত শশাঙ্ক গৌড়ের স্বাধীন শাসক ছিলেন।
তার রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ।
(ii) থানেশ্বর:- এখানে পুষ্যভূতি বংশের রাজা যেমন প্রভাকর বর্ধন,
রাজ্যবর্ধন ও হর্ষবর্ধন নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে
ওঠে।
(iii) কনৌজ:- এখানে মৌখরী বংশীয় গ্রহবর্মার নেতৃত্বে একটি রাজত্ব গড়ে
ওঠে। শেষে কনৌজ থানেশ্বরের সঙ্গে যুক্ত হয়।
(iv) বলবি:- এখানে ভট্টারক নামক এক সেনাপতি স্বাধীনভাবে রাজত্ব শুরু করেন।
মৈত্রকে বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন দ্বিতীয় ধ্রুবসেন।
এছাড়া দক্ষিণ ভারতে চালুক্য, পল্লববংশীয় রাজারা শক্তিশালী হয়ে
ওঠে।
(ঙ) সেন রাজাদের আদি নিবাস কোথায় ছিল ? কিভাবে তারা বাংলার শাসন কায়েম
করেছিলেন ?
উত্তরঃ - সেন রাজাদের আদি বাসস্থান ছিল দক্ষিণ ভারতের কর্ণাট অঞ্চল।
অর্থাৎ মহীশূর এবং তার আশেপাশের এলাকা। সেন বংশের সামন্তসেন একাদশ
শতকের কোন একসময় কর্ণাট ছেড়ে রাঢ় অঞ্চলে চলে যান। সামন্তসেন এবং তার ছেলে
হেমন্তসেন এর আমলে রাঢ় অঞ্চলে সেনদের কিছুটা আধিপত্য তৈরী হয়েছিল।
হেমন্তসেন এর ছেলে বিজয়সেন রাঢ় গৌড় , পূর্ববঙ্গ এবং মিথিলা জয় করে সেন
রাজাদের পরিধি বাড়িয়ে ছিলেন। বিজয়সেনের পর তার পুত্র বল্লালসেনের রাজ্য
পশ্চিমের মগধ ও মিথিলা থেকে পূর্ববঙ্গ পর্যন্ত এবং উত্তর দিনাজপুর , বগুড়া
থেকে দক্ষিণে সুমদ্র উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বল্লালসেনের পুত্র এবং
উত্তরাধিকারী লক্ষণসেন প্রয়াগ, বারাণসী এবং পুরীতে তার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা
করেছিলেন। লক্ষণসেনকে বাংলার শেষ স্বাধীন রাজা বলা হয়।
(চ) সুলতান মাহমুদ ভারত থেকে লুট করা ধনসম্পদ কিভাবে ব্যবহার করেছিল
?
উত্তরঃ - সুলতান মাহমুদ ভারতের ইতিহাসে একজন আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত
হয়ে আছেন। তিনি লুটকৃত সম্পত্তিকে নিজের রাজ্যের ভালো কাজে ব্যবহার করেন।
তার আমলে রাজধানী গজনী এবং অন্যান্য শহরকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল।
মাহমুদ সেখানে প্রাসাদ , মসজিদ, গ্রন্থাগার , বাগিচা , জলধারা , খাল এবং
আমুদরিয়ার উপর বাঁধ নির্মাণ করেন। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যায় তৈরী করেন এবং
শিক্ষকদের বেতন ও ছাত্রদের বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।
(ছ) ত্রিশক্তি সংগ্রাম কাদের মধ্যে হয়েছিল ? এই সংগ্রামের মূল কারণ কি ছিল
?
উত্তরঃ - ৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর উত্তর ভারতে রাজনৈতিক
শূন্যতা দেখা দেয়। কনৌজ ছিল উত্তর ভারতের প্রাণকেন্দ্র। যে কনৌজ
নিয়ন্ত্রণ করবে সেই গাঙ্গেয় উপত্যকা নিজ দখলে রাখতে পারবে। এই অবস্থায়
অষ্টম শতাব্দী থেকে পাল-গুর্জর-প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূট বংশের মধ্যে
পারস্পরিক সংগ্রাম চলে। একে বলা হয় 'ত্রিশক্তি সংগ্রাম'।
ত্রিশক্তি সংগ্রামের মূল কারণ:-
এই বিদ্রোহের কারণগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হলো -
(ক) অবস্থানগত দিক থেকে কনৌজ ছিল উত্তর ভারত বা উত্তরাপথের একটি
গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
(খ) সে সময় কনৌজ ছিল ভারতের মূল রাজনৈতিক ভাবকেন্দ্র।
(গ) কনৌজ দখল করলে গাঙ্গেয় উপত্যকার উর্বর ভূমি এবং এখানকার বিশাল খনিজ
দ্রব্য সহজে অধিকার করা যেত।
(জ) খিলাফৎ কাকে বলা হয়?
উত্তরঃ - মোহাম্মদের মৃত্যুর পর ইসলাম জগতের নেতৃত্ব কে দেবেন - তা নিয়ে
প্রশ্ন ওঠে। তখন মোহাম্মদের প্রধান চার সঙ্গীরা একে একে মুসলমানদের নেতা
নির্বাচিত হন। এদের বলা হয় খলিফা। খলিফা শব্দটা আরবি শব্দ যার মানে
প্রতিনিধি বা উত্তরাধিকারী। প্রথম খলিফা ছিলেন আবু বকর। খলিফাই হলেন
ইসলামীয় রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা। যেসব অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের
ক্ষমতা ছড়িয়ে পড়েছে , সেগুলি হলো দার - উল ইসলাম। খলিফা এই পুরো দার -উল
ইসলামের প্রধান নেতা। তাঁর অধিকৃত অঞ্চলের নাম ঢিলাফৎ।
(ঝ) টীকা লেখো :- কর্ণসুবর্ণ
উত্তরঃ - কর্ণসুবর্ণ:- পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার চিরুটি যার বর্তনাম নাম কর্ণসুবর্ণ।
কর্ণসুবর্ণ ছিল সেকালের গৌড়ের রাজধানী শহর। হিউয়েন স্যাং লিখেছেন যে , এই
দেশটি জনবহুল এবং এখানকার মানুষেরা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে জমি নিচু ও
আর্দ্র, নিয়মিত কৃষিকাজ হয় , জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ এবং একানকার মানুষজনের
চরিত্র ভালো ও তারা শিক্ষাদীক্ষার পৃষ্ঠপোষক। কর্ণসুবর্ণে বৌদ্ধ এবং শৈব
উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই বসবাস করত।
কর্ণসুবর্ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিককেন্দ্র ও প্রশাসনিক কেন্দ্র
ছিল। শশাঙ্কের আমলের অনেক আগে থেকেই সম্ভবত এই অঞ্চলের সঙ্গে
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। কর্ণসুবর্ণের রাজনীতিতে
পালাবদল ঘটেছে বারবার। শশাঙ্কের মৃত্যুর পরে এই শহর অল্প সময়ের জন্য
কামরূপের রাজা ভাস্করবর্মার হাতে চলে যায়। এর পর কিছুকাল এটি জয়নাগের
রাজধানী ছিল।
No comments:
Post a Comment